وَقَالَ
رَبُّكُمُ
ادْعُوْنِیْۤ
اَسْتَجِبْ
لَكُمْ ؕ
اِنَّ
الَّذِیْنَ
یَسْتَكْبِرُوْنَ
عَنْ
عِبَادَتِیْ
سَیَدْخُلُوْنَ
جَهَنَّمَ
دٰخِرِیْنَ
۟۠
۳

আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা'আলার এই অনুগ্রহ ও দয়ার উপর আমাদের জীবনকে উৎসর্গ করা উচিত যে, তিনি আমাদেরকে তাঁর নিকট প্রার্থনা করার জন্যে হিদায়াত করছেন এবং তা কবূল করার ওয়াদা করছেন! হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ) বলতেন:“হে ঐ সত্তা, যাঁর কাছে ঐ বান্দা খুবই প্রিয়পাত্র হয় যে তার কাছে খুব বেশী প্রার্থনা করে এবং ঐ বান্দা খুবই মন্দ ও অপ্রিয় হয় যে তার কাছে প্রার্থনা করে না। হে আমার প্রতিপালক! এই গুণ তো একমাত্র আপনার মধ্যেই রয়েছে। কবি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহর মাহাত্ম্য এই যে, যদি তুমি তার কাছে চাওয়া পরিত্যাগ কর তবে তিনি অসন্তুষ্ট হন, পক্ষান্তরে আদম সন্তানের কাছে যখন চাওয়া হয় তখন সে অসন্তুষ্ট হয়।”হযরত কা'বুল আহ্বার (রাঃ) বলেন, উম্মতে মুহাম্মাদ (সঃ)-কে এমন তিনটি জিনিস দেয়া হয়েছে যা পূর্ববর্তী কোন উম্মতকে দেয়া হয়নি। আল্লাহ তা'আলা যখন কোন নবী (আঃ)-কে পাঠাতেন তখন তাকে বলতেনঃ “তুমি তোমার উম্মতের উপর সাক্ষী থাকলে।” আর তোমাদেরকে (উম্মতে মুহাম্মাদী সঃ-কে) তিনি সমস্ত লোকের উপর সাক্ষী করেছেন। পূর্ববর্তী প্রত্যেক নবী (আঃ)-কে বলা হতোঃ “দ্বীনের ব্যাপারে তোমার উপর কোন বাধ্য-বাধকতা নেই। পক্ষান্তরে এই উম্মতকে বলা হয়েছেঃ “তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন বাধ্যবাধকতা নেই।” পূর্ববর্তী প্রত্যেক নবী (আঃ)-কে বলা হতোঃ “তুমি আমাকে ডাকো, আমি তোমার ডাকে সাড়া দিবো।” আর এই উম্মতকে বলা হয়েছেঃ “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো।” (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) নবী (সঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ তা'আলা তাঁকে বলেনঃ “চারটি স্বভাব রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে একটি আমার জন্যে, একটি তোমার জন্যে, একটি আমার ও তোমার মাঝে এবং একটি তোমার ও অন্যান্য বান্দাদের মাঝে। যা আমার জন্যে তা এই যে আমারই ইবাদত করবে এবং আমার সাথে অন্য কাউকেও শরীক করবে না। তোমার হক আমার উপর এই যে, আমি তোমাকে তোমার প্রতিটি ভাল কাজের পূর্ণ প্রতিদান প্রদান করবো। যা তোমার ও আমার মাঝে তা এই যে, তুমি আমার কাছে প্রার্থনা করবে এবং আমি তোমার প্রার্থনা কবুল করবো। আর যা তোমার এবং আমার অন্যান্য বান্দাদের মাঝে তা এই যে, তুমি তাদের জন্যে ওটাই পছন্দ করবে যা তুমি নিজের জন্যে পছন্দ কর।” (এ হাদীসটি হাফিয আবু ইয়ালা (রঃ) বর্ণনা করেছেন) হযরত নুমান ইবনে বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “দু'আ হলো ইবাদত।” অতঃপর তিনি ... (আরবী)-এই আয়াতটি পাঠ করেন। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। সুনানের মধ্যে এ হাদীসটি রয়েছে। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন। ইবনে হিব্বান (রঃ) এবং হাকিমও (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি মহামহিমান্বিত আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে না তিনি তার প্রতি রাগান্বিত হন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত মুহাম্মাদ ইবনে মুসাল্লামা আনসারীর (রাঃ) মৃত্যুর পর তাঁর তরবারীর কোষ হতে এক টুকরা কাগজ বের হয়। তাতে লিখিত ছিলঃ “তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের রহমত লাভের সুযোগ অন্বেষণ করতে থাকো। খুব সম্ভব যে, তোমরা কল্যাণের দু'আ করবে, আর ঐ সময় আল্লাহর রহমত উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠবে এবং তোমরা এমন সৌভাগ্য লাভ করবে যার পরে আর কখনো তোমাদেরকে দুঃখ ও আফসোস করতে হবে না।” (এটা হাফিয আবু মুহাম্মদ হাসান ইবনে আবদির রহমান রামহারামযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)এ আয়াতে ইবাদত দ্বারা দু'আ ও তাওহীদকে বুঝানো হয়েছে।হযরত আমর ইবনে শুআয়েব (রাঃ) তাঁর পিতা হতে এবং তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন অহংকারী লোকদেরকে পিঁপড়ার আকারে একত্রিত করা হবে। ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতম জিনিসও তাদের উপর থাকবে। তাদেরকে কূলাস নামক জাহান্নামের জেলখানায় নিক্ষেপ করা হবে। প্রজ্বলিত অগ্নি তাদের মাথার উপর থাকবে। তাদেরকে জাহান্নামীদের রক্ত, পুঁজ এবং প্রস্রাব-পায়খানা খেতে দেয়া হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)অহীব ইবনুল অরদ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তাঁকে একজন বুযুর্গ ব্যক্তি বলেছেন, রোমে আমি কাফিরদের হাতে বন্দী হয়েছিলাম। একদা আমি শুনতে পেলাম যে, এক অদৃশ্য আহ্বানকারী পর্বতের চূড়া হতে উচ্চস্বরে আহ্বান করে বলছেঃ “হে আমার প্রতিপালক! ঐ ব্যক্তির জন্যে বিস্মিত হতে হয় যে আপনাকে চেনা জানা সত্ত্বেও অন্যের সাথে তার আশা-আকাঙ্ক্ষার সম্পর্ক রাখতে চায়। হে আমার প্রতিপালক! ঐ ব্যক্তির জন্যে বিস্ময়বোধ হয় যে আপনার পরিচয় লাভ করা সত্ত্বেও নিজের প্রয়োজন পুরো করবার জন্যে অন্যের কাছে গমন করে!” এরপর কিছুক্ষণ থেমে থেকে আরো উচ্চস্বরে বললোঃ “আরো বেশী বিস্মিত হতে হয় ঐ ব্যক্তির জন্যে যে মহান আল্লাহর পরিচয় জানা সত্ত্বেও অন্যের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এমন কাজ করে যে কাজে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।” একথা শুনে আমি উচ্চস্বরে ডাক দিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলামঃ তুমি কি দানব, না মানব? সে উত্তরে বললোঃ “মানব!” তারপর বললোঃ “ঐ সব কাজ হতে তুমি তোমার ধ্যান সরিয়ে নাও যাতে তোমার কোন উপকার নেই এবং যে কাজে তোমার উপকার আছে সেই কাজে মগ্ন হয়ে পড়।” (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)