اَوَمَنْ
كَانَ
مَیْتًا
فَاَحْیَیْنٰهُ
وَجَعَلْنَا
لَهٗ
نُوْرًا
یَّمْشِیْ
بِهٖ
فِی
النَّاسِ
كَمَنْ
مَّثَلُهٗ
فِی
الظُّلُمٰتِ
لَیْسَ
بِخَارِجٍ
مِّنْهَا ؕ
كَذٰلِكَ
زُیِّنَ
لِلْكٰفِرِیْنَ
مَا
كَانُوْا
یَعْمَلُوْنَ
۟
3

এটা আল্লাহ তাআলা দৃষ্টান্ত হিসাবে বর্ণনা করেছেন যে, মুমিন ব্যক্তি, যে প্রথমে মৃত ছিল অর্থাৎ পথভ্রষ্টতায় ধ্বংসপ্রাপ্ত ও হয়রান-পেরেশান ছিল, তাকে তিনি জীবিত করলেন, অর্থাৎ তার অন্তরে ঈমানরূপ সম্পদ দান করলেন এবং রাসূল (সঃ)-এর অনুসরণ করার তাওফীক প্রদান করলেন। তার জন্যে তিনি একটা নূর বা আলোকের ব্যবস্থা করলেন, যার সাহায্যে সে পথ চলতে পারছে। এই কুরআন নূর বা আলোকই বটে। এই মুমিন কি ঐ ব্যক্তির মত হতে পারে যে স্বীয় অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তির অন্ধকারে নিমজ্জিত রয়েছে? সে সেই অন্ধকার। থেকে কোনক্রমেই বের হতে পারছে না বা সেখান থেকে বের হওয়া তার জন্যে কখনও সম্ভবই নয়? যেমন নবী (সঃ) বলেছেন- “আল্লাহ তাআলা স্বীয় মাখলুককে অন্ধকারের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি ওর উপর আলো বর্ষণ করেছেন। যে ব্যক্তি ঐ নূর বা আলো পেয়ে গেলো সে হিদায়াত লাভ করলো। আর যে ওটা পেলো না সে দুনিয়াতে পথভ্রষ্টই থেকে গেলো। (এটা তিবরানী (রঃ) হাকাম ইবনে আবান (রঃ)-এর হাদীস হতে বর্ণনা করেছেন) যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “আল্লাহ ঐ লোকদের ওলী বা অভিভাবক, যারা ঈমান এনেছে, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোকের দিকে নিয়ে আনেন, আর যারা কাফির হয়েছে, তাদের ওলী হচ্ছে শয়তানের দল, তারা তাদেরকে আলো হতে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়, এই প্রকারের লোকই জাহান্নামবাসী, তারা ওর মধ্যে অনন্তকাল অবস্থান করবে।” আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ “যে ব্যক্তি (হোঁচট খেয়ে) উপুড় হয়ে পড়তে পড়তে (পথ) চলছে, সে কি গন্তব্যস্থানে তাড়াতাড়ি পৌঁছতে পারে, না সেই ব্যক্তি, যে সোজা এক সমতল পথে গমন করছে?” মহান আল্লাহ আরও বলেনঃ “দু' প্রকারের লোকদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে এইরূপ যে, একজন অন্ধ ও বধির এবং অন্যজন চক্ষু ও কর্ণ বিশিষ্ট, এ দু’জন কি সমান হতে পারে? তোমরা কি এটা মোটেই বুঝছো না?” তিনি আর এক জায়গায় বলেনঃ “অন্ধ ও দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তি সমান হতে পারে না এবং সমান হতে পারে না অন্ধকার ও আলো, ছায়া ও (রৌদ্রের) প্রখরতা, আর সমান হতে পারে না জীবিত ও মৃত, আল্লাহ যাকে চান তাকে শুনিয়ে থাকেন এবং যে ব্যক্তি কবরে রয়েছে তাকে তুমি শুনাতে পার না। তুমি তো শুধুমাত্র ভয় প্রদর্শক।” এই বিষয়ের উপর কুরআন কারীমের বহু আয়াত রয়েছে। এই দৃষ্টান্তগুলোতে হচ্ছে আলো ও অন্ধকার, সূরার প্রথমে এই দৃষ্টান্ত দ্বারাই সূচনা করা হয়েছে অর্থাৎ দ্বারা শুরু করা হয়েছে।কারও কারও ধারণা এই যে, এই দৃষ্টান্ত দ্বারা দু’টি নির্দিষ্ট লোককে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং বলা হয়েছে যে, হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) যিনি প্রথমে মৃত (পথভ্রষ্ট) ছিলেন, অতঃপর আল্লাহ তাকে জীবিত করেছেন (সুপথ দেখিয়েছেন) এবং তাঁকে নূর বা আলো দান করেছেন। তিনি সেই আলো নিয়ে লোকদের মধ্যে চলাফেরা করেছেন। আবার একথাও বলা হয়েছে যে, হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু যে ব্যক্তি অন্ধকারের মধ্যে রয়েছে সে তা থেকে বের হতে পারে না। সে হচ্ছে আবু জেহেল (আমর ইবনে হিশাম)। সঠিক কথা এই যে, এই আয়াতটি আম বা সাধারণ। সমস্ত মুমিন ও কাফিরই এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে (আরবী) অর্থাৎ এরূপেই কাফিরদের জন্যে তাদের কার্যকলাপ চাকচিক্যময় বানিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এটা হচ্ছে তাদের অজ্ঞতা ও পথভ্রষ্টতারই কারণ।