এখানে মুশরিকদের কথাকে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে যারা আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক বানিয়ে নেয় এবং শয়তানের উপাসনায় লিপ্ত হয়ে পড়ে। যদি প্রশ্ন করা হয় যে, তারা তো মূর্তিগুলোর পূজা করতো, তাহলে শয়তানের পূজা করার ভাবার্থ কি? উত্তরে বলা যাবে যে, তারা তো শয়তান কর্তৃক পথভ্রষ্ট হয়ে এবং তার অনুগত হয়েই মূর্তিপূজা করতো। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “তারা আল্লাহকে পরিত্যাগ করে শুধুমাত্র কয়েকটি নারী জাতীয় বস্তুর পূজা করে (অর্থাৎ ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা মনে করে ঐ মেয়ে ফেরেশতাদের পূজা করতে শুরু করে। নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক), আর শুধু শয়তানের পূজা করে, যে (আল্লাহর) নির্দেশ লংঘনকারী। যাকে আল্লাহ স্বীয় (বিশেষ) করুণা হতে দূরে নিক্ষেপ করেছেন এবং যে (আল্লাহকে) বলেছিল- আমি অবশ্যই আপনার বান্দাগণ হতে স্বীয় নির্ধারিত অংশ নিয়ে নেবো, (আনুগত্যের দ্বারা) আমি ওদেরকে পথভ্রষ্ট করবো এবং তাদেরকে বৃথা আশ্বাস প্রদান করবো আর আমি তাদেরকে শিক্ষা দেবো যেন তারা (প্রতিমার নামে) চতুষ্পদ জন্তুর কান কর্তন করে এবং তাদেরকে (আরও) শিক্ষা দেবো যেন তারা আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতিকে বিকৃত করে দেয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ত্যাগ করে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে, সে নিশ্চয়ই প্রকাশ্য ক্ষতিতে নিপতিত হবে । শয়তান তাদের সাথে অঙ্গীকার করে ও বৃথা আশ্বাস দেয়; আর শয়তান এদের সাথে শুধু মিথ্যে (প্রবঞ্চনা মূলক) অঙ্গীকার করে। যেমন মহান আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেনঃ “তোমরা কি আমাকে ছেড়ে শয়তান ও তার সন্তানদেরকে বন্ধু বানিয়ে নিয়েছো? অথচ তোমাদের উচিত ছিল আমারই অঞ্চল চেপে ধরা।” ইবরাহীম (আঃ) তাঁর পিতাকে বলেছিলেনঃ “হে পিতা! আপনি শয়তানের ইবাদত করবেন না, শয়তান তো হচ্ছে রহমানের (আল্লাহর) অবাধ্য।” যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “হে আদম সন্তানগণ! (এবং হে জ্বীনগণ) আমি কি তোমাদেরকে সতর্ক করে দেইনি যে, তোমরা শয়তানের পূজা করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। আর এও যে, তোমরা শুধু আমারই ইবাদত করো; এটাই সরল পথ।” কিয়ামতের দিন ফেরেশতাগণ বলবেনঃ “আপনি পবিত্র। আপনি আমাদের অলী। এই মুশরিকরা যদিও আমাদেরকে আল্লাহর কন্যা' -এ কথা বলে পূজা করেছে, কিন্তু আমাদের তাদের সাথে কোনই সম্পর্ক নেই। এরা তো প্রকৃতপক্ষে শয়তানেরই পূজা করেছে!” যেমন আল্লাহ তা'আলা এখানে বলেনঃ “এই মুশরিকরা শয়তানদেরকে আল্লাহর শরীক বানিয়ে নিয়েছে, অথচ তাদেরকেও এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং তারা আল্লাহর সাথে তাঁরই মাখলুক বা সৃষ্টকে কি করে পূজা করছে!” যেমন হযরত ইবরাহীম (আঃ) বলেছিলেনঃ “তোমরা কি এমন জিনিসের পূজা করছো যাদেরকে তোমরা স্বয়ং নিজ হস্তে বানিয়েছ? অথচ তোমাদেরকেও এবং তোমাদের এইসব বানানো জিনিসকেও আল্লাহই সষ্টি করেছেন। এ জন্যে তোমাদের উচিত যে, তোমরা একমাত্র এক-অদ্বিতীয় আল্লাহরই ইবাদত করে তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করবে। আল্লাহ পাক বলেনঃ “তারা না জেনে না বুঝে আল্লাহর জন্যে পুত্র-কন্যা রচনা করে। এখানে আল্লাহ তাআলার গুণাবলীর মধ্যে বিভ্রান্তের বিভ্রান্তির উপর সাবধান বাণী উচ্চারণ করা হচ্ছে। যেমন ইয়াহূদীরা বলে যে, উযায়ের (আঃ) আল্লাহর পুত্র, অথচ তিনি একজন পয়গম্বর। আর খ্রীষ্টানরা বলে যে, ঈসা (আঃ) আল্লাহর পুত্র এবং আরবের মুশরিকরা ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা বলতো। এই অত্যাচারীরা যে উক্তি করছে, আল্লাহ তা থেকে বহু ঊর্ধ্বে। (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে- তারা মন দ্বারা গড়িয়ে নিয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে- তারা অনুমান করে নিয়েছে। আওফী (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে-তারা মীমাংসা করে নিয়েছে। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে তারা মিথ্যা কথা বানিয়ে নিয়েছে। ভাবার্থ হলো এই যে, যাদেরকে তারা ইবাদতে শরীক করে নিচ্ছে তাদেরকে আল্লাহ তা'আলাই সৃষ্টি করেছেন। তারা প্রকৃত ব্যাপার সম্পর্কে ওয়াকিফহাল না হয়েই এইসব কথা বলছে। তারা আল্লাহ তা'আলার শ্রেষ্ঠত্ব ও বুযুর্গী সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ। যিনি আল্লাহ, তাঁর পুত্র, কন্যা, স্ত্রী কি করে হতে পারে! এ জন্যেই তিনি বলেনঃ তিনি মহিমান্বিত, তাদের আরোপিত বিশেষণগুলো হতে বহু ঊর্ধ্বে।