৮৭ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা বানী ইসরাঈলের অবাধ্যতা, অহমিকা ও প্রবৃত্তি পূজার বর্ণনা তুলে ধরার পর যে সকল নেয়ামত তাদেরকে প্রদান করেছিলেন তার অন্যতম একটি এখানে উল্লেখ করে বলছেন যে, আমি মূসাকে কিতাব তথা তাওরাত দান করেছি। কিন্তু তারা (ইয়াহূদীরা) তাওরাতেও পরিবর্তন-পরিবর্ধন করেছে এবং তার নির্দেশ অমান্য করেছে ও অপব্যাখ্যা করেছে। মূসা (আঃ)-এর পর বানী ইসরাঈলের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা ধারাবাহিকভাবে নাবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। যেন তারা তাওরাতের বিধি-বিধান অনুপাতে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِنَّآ اَنْزَلْنَا التَّوْرٰٿةَ فِیْھَا ھُدًی وَّنُوْرٌﺆ یَحْکُمُ بِھَا النَّبِیُّوْنَ الَّذِیْنَ اَسْلَمُوْا لِلَّذِیْنَ ھَادُوْا وَالرَّبّٰنِیُّوْنَ وَالْاَحْبَارُ بِمَا اسْتُحْفِظُوْا مِنْ کِتٰبِ اللہِ وَکَانُوْا عَلَیْھِ شُھَدَا۬ئَﺆ)
“আমি তো অবতীর্ণ করেছিলাম তাওরাত যাতে ছিল হিদায়াত ও নূর। এ তাওরাতের মাধ্যমে ইয়াহূদীদের মীমাংসা দিত আল্লাহর অনুগত নাবী, দরবেশ ও ‘আলিমরা। কেননা তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের হিফাযাতের আদেশ প্রদান করা হয়েছিল আর তারা ছিল তার সাক্ষী।”(সূরা মায়িদাহ ৫:৪৪)
কিন্তু বানী ইসরাঈলরা নাবীদের সাথে খুব অসদাচরণ করত। এসনদটি তারা কোন কোন নাবীদেরকে হত্যাও করেছে। আবার কোন কোন নাবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। এর কারণ ছিল এটাই যে, নাবীরা যা কিছু নিয়ে আসত তা তাদের মনঃপুত হত না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَفَکُلَّمَا جَا۬ءَکُمْ رَسُوْلٌۭ بِمَا لَا تَھْوٰٓی اَنْفُسُکُمُ اسْتَکْبَرْتُمْﺆ فَفَرِیْقًا کَذَّبْتُمْﺑ وَفَرِیْقًا تَقْتُلُوْنَ)
“কিন্তু পরে যখন তোমাদের নিকট কোন রাসূল তোমাদের প্রবৃত্তি যা ইচ্ছা করত না তা নিয়ে উপস্থিত হল, তখন তোমরা অহংকার করলে; অবশেষে একদলকে মিথ্যাবাদী বললে এবং একদলকে হত্যা করলে।”(সূরা বাকারাহ ২:৮৭)
বানী ইসরাঈলের মাঝে নাবীদের আগমনের ধারাবাহিকতায় মূসা (আঃ)-র পর ঈসা (আঃ)- আগমন করেন। তিনি বানী ইসরাঈলের সর্বশেষ নাবী ও কিতাবধারী রাসূল। তিনি ইঞ্জিল প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তাঁর পর থেকে শেষ নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আবির্ভাব পর্যন্ত কোন নাবী আগমন করেননি। এ সময়টাকে
فَتْرَةُ الرُّسُلِ
বা রাসূল আগমনের বিরতিকাল বলা হয়। কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে ঈসা (আঃ) আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে পুনরায় পৃথিবীতে অবতরণ করবেন এবং মুহাম্মাদী শরীয়ত অনুসরণে ইমাম মাহদীর নেতৃত্বে সারা পৃথিবীতে শান্তির রাজ্য কায়িম করবেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী প্রদান করেছিলেন। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَرَسُوْلًا اِلٰی بَنِیْٓ اِسْرَا۬ءِیْلَﺃ اَنِّیْ قَدْ جِئْتُکُمْ بِاٰیَةٍ مِّنْ رَّبِّکُمْﺫ اَنِّیْٓ اَخْلُقُ لَکُمْ مِّنَ الطِّیْنِ کَھَیْئَةِ الطَّیْرِ فَاَنْفُخُ فِیْھِ فَیَکُوْنُ طَیْرًۭا بِاِذْنِ اللہِﺆ وَاُبْرِیُٔ الْاَکْمَھَ وَالْاَبْرَصَ وَاُحْیِ الْمَوْتٰی بِاِذْنِ اللہِﺆ وَاُنَبِّئُکُمْ بِمَا تَاْکُلُوْنَ وَمَا تَدَّخِرُوْنَﺫ فِیْ بُیُوْتِکُمْﺚ)
“আর তিনি হবেন বানী ইসরাঈলের একজন রাসূল। (তিনি কওমের কাছে গিয়ে বলবেন) আমি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে কিছু নিদর্শন নিয়ে এসেছি। যেমন আমি তোমাদের জন্য কাদামাটি দিয়ে পাখি আকৃতির ন্যায় তৈরী করব, তারপর তাতে ফুঁৎকার দেব, ফলে আল্লাহর নির্দেশে তা পাখিতে পরিণত হবে। আর আমি আল্লাহর নির্দেশে জন্মান্ধ ও শ্বেত রোগীকে ভাল করে দেব, মৃতকে জীবিত করব এবং তোমরা যা খাও এবং তোমাদের ঘরে যা জমা রাখ তাও বলে দেব।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:৪৯)
(وَاَیَّدْنٰھُ بِرُوْحِ الْقُدُسِ)
‘জিবরীল দ্বারা তাকে শক্তিশালী করেছি’রুহুল কুদুস হলেন জিবরীল (আঃ)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(نَزَلَ بِهِ الرُّوحُ الْأَمِينُ)
জিব্রাঈল এটা নিয়ে অবতরণ করেছে। (সূরা শুআ‘রা ২৬:১৯৩)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
اللّٰهُمَّ أَيِّدْهُ بِرُوحِ الْقُدُسِ ما نَافَحَ عن نَبِيِّكَ
হে আল্লাহ! তুমি হাসানকে রুহুল কুদুস দ্বারা শক্তিশালী কর যতক্ষণ সে আপনার নাবীর পক্ষ থেকে উত্তর দিচ্ছে। (আবূ দাঊদ হা: ৫০১৫, তিরমিযী হা: ২৮৪৬, সহীহ) অতএব বুঝা যাচ্ছে রুহুল কুদুস দ্বারা উদ্দেশ্য হল জিবরীল (আঃ)। আল্লাহ তা‘আলা ঈসা (আঃ)-কে জিবরীল দ্বারা সহযোগিতা করেছিলেন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা নাবীদেরকে ফেরেশতার মাধ্যমে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন।
২. নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা দেন তা মাথা পেতে মেনে নিতে হবে অন্যথায় মু’মিন হওয়া যাবে না, যেমন বানী ইসরাঈলের এক শ্রেণি নাবীদের পয়গাম মনঃপুত না হলে মেনে নিত না।