خَتَمَ
اللّٰهُ
عَلٰی
قُلُوْبِهِمْ
وَعَلٰی
سَمْعِهِمْ ؕ
وَعَلٰۤی
اَبْصَارِهِمْ
غِشَاوَةٌ ؗ
وَّلَهُمْ
عَذَابٌ
عَظِیْمٌ
۟۠
3

৭ নং আয়াতের তাফসীর:

অর্থাৎ সত্য গ্রহণে কাফিরদের অন্তঃকরণ, শ্রবণশক্তি ও দর্শনশক্তি আচ্ছাদিত করে দেয়া হয়েছে। ফলে তারা সত্য অনুধাবন করতে পারে না, শুনতে পায় না এবং দেখতেও পায় না।

ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন: এ ব্যাপারে উম্মাত ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, অন্তর মোহরাঙ্কিত করাও আল্লাহ তা‘আলা নিজের একটি বিশেষ গুণরূপে উল্লেখ করেছেন। মূলত কাফিরদের অন্তর ঈমান আনা থেকে মোহরাঙ্কিত হয়ে যায় তাদের কুফরীর প্রতিদানস্বরূপ।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(بَلْ طَبَعَ اللّٰهُ عَلَيْهَا بِكُفْرِهِمْ)

“বরং তাদের কুফরীর কারণে আল্লাহ তাদের হৃদয়সমূহে মোহর মেরে দিয়েছেন।”(সূরা নিসা ৪:১৫৫)

হাদীসেও এসেছে আল্লাহ তা‘আলা অন্তরের পরিবর্তনকারী। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু‘আ করতেন:

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِيْ عَلَي دِيْنِكَ

হে অন্তরের পরিবর্তন আনয়নকারী আমাদের অন্তরকে তোমার দীনের ওপর অটল রাখুন। (তিরমিযী হা: ২১৪০, ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান।)

সাহাবী হুযাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, অন্তরে ফেতনা এমনভাবে উপস্থিত হয় যেমন একটি মাদুর। একটি একটি পাতা যুক্ত করে যেমন মাদুর তৈরি করা হয় ঠিক তেমনভাবে অন্তরে একটি একটি করে ফেতনা আসে। যে অন্তর তা গ্রহণ করে নেয় তাতে একটা কালোদাগ পড়ে যায়। সে অন্তরে কালো দাগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং শেষে সবটাই কালো করে দেয়। তখন তা উল্টানো কলসের মত হয়ে যায়; ভাল কথাও তার ভাল লাগে না এবং মন্দ কথাও খারাপ লাগে না। (সহীহ মুসলিম হা: ১৪৪)

হাদীসে এসেছে- মু’মিন যখন পাপ কাজ করে তখন তার অন্তরে একটা কালো দাগ পড়ে যায়। যদি সে পাপ কাজ থেকে ফিরে আসে ও বিরত থাকে তবে দাগটি মুছে যায় এবং অন্তর পরিস্কার হয়ে যায়। আর যখন গুনাহ করতেই থাকে তখন সে কালো দাগ আরো ছড়িয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত সমস্ত অন্তরকে ছেয়ে ফেলে। এটাই সে মরিচা যার বর্ণনা এ আয়াতে রয়েছে-

(كَلَّا بَلْ ﺒ رَانَ عَلٰي قُلُوْبِهِمْ مَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ)

“কখনও নয়; বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনের ওপর মরিচারূপে জমে গেছে।”(সূরা মুতাফফিফীন ৮৩:১৪)। (তিরমিযী হা: ৩৩৩৪, ইবনু মাযাহ হা: ৪২৪৪, ইমাম তিরমিযী বলেন: হাদীসটি হাসান সহীহ।)

সুতরাং আমাদের উচিত সর্বদা সত্য গ্রহণে সচেষ্ট থাকা। আর বেশি বেশি আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করা:

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلٰي دِينِكَ

“হে অন্তরের পরিবর্তনকারী আমার অন্তরকে তোমার দীনের ওপর অটল রাখ”। (তিরমিযী হা: ২১৪০, সিলসিলা সহীহাহ হা: ২০৯১)

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. জান্নাত পেতে হলে আমাদেরকে মু’মিন-মুত্তাকীদের গুণাবলী অর্জন করতে হবে, শুধু মৌখিক দাবি করে বসে থাকলে হবে না।

২. হিদায়াত দেয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, আমাদের দায়িত্ব মানুষকে সঠিকভাবে দাওয়াত দেয়া এবং আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করা।

৩. মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ হয় তার কর্মের কারণে। কাফিররা তাদের কর্মের কারণে ঈমান থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

৪. আল্লাহ তা‘আলা অন্তরের মালিক, যেভাবে ইচ্ছা পরিবর্তন করেন। তাই আমাদের বেশি বেশি দু‘আ করা দরকার যেন তিনি আমাদের অন্তর দীনের ওপর অটল রাখেন।