৬৮-৭১ নং আয়াতের তাফসীরএখানে আল্লাহ তা'আলা বানী ইসরাঈলের অবাধ্যতা, দুষ্টামি ও আল্লাহর নির্দেশের ব্যাপারে তাদের খুঁটি নাটি প্রশ্নের বর্ণনা দিচ্ছেন। তাদের উচিত ছিল হুকুম পাওয়া মাত্রই তার উপর আমল করা। কিন্তু তা না করে তারা বার বার প্রশ্ন করতে থাকে। ইবনে জুরাইয (রঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “নির্দেশ পাওয়া মাত্রই যদি তারা যে কোন গৰু যবাহ করতো তবে তাই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু তারা ক্রমাগত প্রশ্ন করতে থাকে এবং তার ফলে কার্যে কাঠিন্য বৃদ্ধি পায়। এমন কি যদি তারা ইনশাআল্লাহ’ না বলতো তবে কখনও এ কাঠিন্য দূর হতো না এবং ওটা তাদের কাছে প্রকাশিত হতো না।”তাদের প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বলা হয় যে, ওটা বৃদ্ধও নয় বা একেবারে কম বয়সেরও নয়, বরং মধ্যম বয়সের। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে ওর রং বর্ণনা করা হয় যে, ওটা হলদে রঙের সুদৃশ্য একটি গরু। হযরত ইবনে আববাস (রাঃ) গরুটির রং হলদে বলেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন যে এখানে অর্থ হচ্ছে কালো রং। কিন্তু প্রথম মতটিই সঠিক। তবে রঙের তীব্রতা ও ঔজ্জ্বল্যের কারণে গরুটি যে কালো রঙের মত দেখাতো সেটা অন্য কথা। অহাব বিন মুনাব্বাহর (রঃ) বলেনঃ “ওর রং এতো গাঢ় ছিল যে, মনে হতো যেন ওটা থেকে সূর্যের কিরণ উথিত হচ্ছে।" তাওরাতে ওর রং লাল বর্ণনা করা হয়েছে। সম্ভবতঃ যিনি ওকে আরবীতে অনুবাদ করেছেন তিনিই ভুল করেছেন। আল্লাহই সবচেয়ে বেশী জানেন। ঐ রঙের ও ঐ বয়সের বহু গরু তাদের চোখে পড়তে বলে তারা হযরত মূসা (আঃ) কে বলেঃ “হে আল্লাহর নবী (আঃ)! আপনি আল্লাহকে অন্য কোন নিদর্শনের কথা জিজ্ঞেস করুন যেন আমাদের সন্দেহ কেটে যায়। ইনশাআল্লাহ আমরা এবারে রাস্তা পেয়ে যাবো।" যদি তারা ইনশাআল্লাহ না বলতো তবে কিয়ামত পর্যন্ত তারা ওরকম গরুর ঠিকানা পেত না। আর যদি তারা প্রশ্নই না করতো তবে তাদের প্রতি এত কঠোরতা অবলম্বন করা হতো না, বরং যে কোন গরু যবাহ্ করলেই যথেষ্ট হতো। এ বিষয়টি একটি মারফু হাদীসেও আছে। কিন্তু ওর সনদটি গরীব। সঠিক কথা এটাই যে, এটা হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) নিজস্ব কথা। আল্লাহ্ই সবচেয়ে বেশী জানেন। এখন গরুটির বিশেষণ বর্ণনা করা হচ্ছে যে, ওটা জমি কর্ষণ করে না বা পানি সেচের কাজেও ওটা ব্যবহৃত হয় না। ওর শরীরে কোন দাগ নেই। ওটা একই রঙের-অন্য কোন রঙের মিশ্রণ মোটেই নেই। ওটা সুস্থ ও সবল। কেউ কেউ বলেন যে, এটা কাজের গরু নয়। তবে ক্ষেতে কাজ করে থাকে বটে কিন্তু পানি সেচের কাজ করে না। কিন্তু একথাটি ভুল, কেননা (আরবি)-এর তাফসীর এটাই যে, ওটা জমি কর্ষণ করে না, পানি সেচন করে না এবং ওর শরীরে কোন দাগ নেই। এখন অনিচ্ছাকৃতভাবে তারা ওর কুরবানী দিতে এগিয়ে গেল। এজন্যেই আল্লাহ পাক বলেন যে, তারা ওটা যবাহ করবে বলে মনে হচ্ছিল না। বরং যবাহ না করার জন্যেই তারা টালবাহানা করছিল। কেউ কেউ বলেছেন যে, অপদস্থ হওয়ার ভয়েই তারা ঐরূপ করছিল। আবার কেউ কেউ বলেন যে, তারা ওর মূল্য শুনেই ঘাবড়িয়ে গিয়েছিল। কোন কোন বর্ণনায় আছে যে, ওর মূল্য লেগেছিল মোট তিনটি স্বর্ণ মুদ্রা। কিন্তু এ বর্ণনাটি এবং গরুর ওজন বরাবর সোনা দেয়ার বর্ণনাটি, এ দুটোই ইসরাঈলী কথা। সঠিক কথা এই যে, তাদের নির্দেশ পালনের ইচ্ছাই ছিল না। কিন্তু এভাবে প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ফলে এবং হত্যার মামলার কারণে তাদেরকে ওটা মানতেই হয়েছিল। আল্লাহই সবচেয়ে বেশী জানেন।এ আয়াত দ্বারা এই মাসয়ালার উপরও দলীল নেয়া যেতে পারে যে, জন্তুকে না দেখেও ধার দেয়া জায়েয। কেননা, পূর্ণভাবে এর বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা ক্রেয়া হয়েছে। যেমন হযরত ইমাম মালিক (রঃ), ইমাম আওযায়ী , ইমামলায় (রঃ), ইমাম শাফিঈ (রঃ), ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রঃ) ও জমহুর উলামার এটাই মাযহাব। এর দলীলরূপে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের নিজের হাদীসটিও আনা যেতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কোন স্ত্রীলোক যেন তার স্বামীর সামনে অপুর কোন স্ত্রীলোকের বৈশিষ্ট্য এমনভাবে বর্ণনা না করে যেন সে তাকে দেখছে। অন্য হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ভুলবশতঃ হত্যার এবং স্বেচ্ছায় অনুরূপ হত্যার দিয়্যাতের উটসমূহের বিশেষত্বঃ ও বর্ণনা করেছেন। তবে ইমাম আবু হানীফা (রঃ), ইমাম সাওরী (রঃ) এবং অন্যান্য কুফীগণ ‘বায়-ই-সালামকে সমর্থন করেন না। তারা বলেন যে, জন্তুসমূহের গুণাবলী ও অবস্থা পূর্ণভাবে বর্ণনা করা ছাড়া অবস্থা আয়ত্বে আসতে পারে না। এ ধরনের বর্ণনা হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হযরত হুজাইফা বিন ইয়ামান (রাঃ) এবং হযরত আবদুর রহমান (রাঃ) প্রভৃতি মনীষীগণ হতেও বর্ণিত হয়েছে।