You are reading a tafsir for the group of verses 2:55 to 2:56
وَاِذْ
قُلْتُمْ
یٰمُوْسٰی
لَنْ
نُّؤْمِنَ
لَكَ
حَتّٰی
نَرَی
اللّٰهَ
جَهْرَةً
فَاَخَذَتْكُمُ
الصّٰعِقَةُ
وَاَنْتُمْ
تَنْظُرُوْنَ
۟
ثُمَّ
بَعَثْنٰكُمْ
مِّنْ
بَعْدِ
مَوْتِكُمْ
لَعَلَّكُمْ
تَشْكُرُوْنَ
۟
3

৫৫-৫৬ নং আয়াতের তাফসীরহযরত মূসা (আঃ) যখন বানী ইসরাঈলের সত্তরজন লোককে সঙ্গে নিয়ে আল্লাহর ওয়াদা অনুযায়ী তূর পাহাড়ে যান এবং ঐ লোকগুলি আল্লাহর কথা শুনতে পায়, তখন তারা মূসা (আঃ) কে বলে যে, তারা আল্লাহকে সামনে না দেখা পর্যন্ত ঈমান আনবে না। এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ প্রশ্নের ফলে দেখতে দেখতেই তাদের উপর আকাশ হতে বিদ্যুৎ পড়ে যায় এবং এক ভয়াবহ উচ্চ শব্দ হয়, তার ফলে তারা সবাই মরে যায়। এদিকে হযরত মূসা (আঃ) বিলাপ করতে থাকেন এবং কেঁদে কেঁদে মহান আল্লাহর নিকট আরজ করেনঃ “হে আল্লাহ্! আমি বানী ইসরাঈলকে কি উত্তর দেবো! এরা তো তাদের মধ্যে উত্তম ও নেতৃস্থানীয় লোক ছিল। হে প্রভু! আপনার এরূপ করার ইচ্ছে থাকলে ইতিপূর্বেই তাদেরকে ও আমাকে মেরে ফেলতেন। হে আল্লাহ! অজ্ঞ লোকেদের অজ্ঞতার কারণে আমাকে ধরবেন না।তার এ প্রার্থনা কবূল হয় এবং তাকে বলা হয় যে, এরাও বাছুর পূজকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাদের শাস্তি হয়ে গেল। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে জীবিত করেন। মুহাম্মদ বিন ইসহাক বলেন যে, যখন হযরত মূসা (আঃ) তাঁর গোত্রের নিকট আসেন এবং তাদেরকে বাছুর পূজতে দেখেন, তিনি তার ভাই হারূনকে (আঃ) ও সামেরীকে তিরস্কার করেন। অতঃপর বাছুরকে পুড়িয়ে ফেলেন এবং ওর ছাই নদীতে ভাসিয়ে দেন। তারপর তাদের মধ্যে হতে উত্তম লোকদেরকে বেছে নেন। তাদের সংখ্যা ছিল সত্তর। তাওবা করাবার জন্যে তিনি তাদেরকে নিয়ে তূর পাহাড়ে চলে যান। তাদেরকে বলেনঃ “তোমরা তাওবা কর, রোযা রাখ, পবিত্র হয়ে যাও এবং কাপড় পাক কর। যখন হযরত মূসা (আঃ) তাদেরকে নিয়ে ভূরে সীনায় পৌছেন , তখন ঐলোকগুলো বলেঃ “হে নবী (আঃ)! আপনি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন যেন তিনি তাঁর কথা আমাদেরকেও শুনিয়ে দেন।হযরত মূসা (আঃ) পাহাড়ের কাছে পৌছলে এক খণ্ড মেঘ এসে সারা পাহাড় ঢেকে নেয় এবং তিনি ওরই ভিতর ভিতর আল্লাহ তা'আলার নিকটবর্তী হয়ে যান। আল্লাহ পাকের কথা আরম্ভ হলে হযরত মূসার (আঃ) কপাল আলোকোজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সেই সময় কেউ তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করার ক্ষমতা রাখতো না। লোকেরা এগিয়ে গেলে তারা মেঘের মধ্যে প্রবেশ করে এবং সবাই সিজদায় পড়ে যায়। হযরত মূসার (আঃ) প্রার্থনার ফলে তাঁর সঙ্গীয় বানী ইসরাঈলও আল্লাহ তা'আলার কথা শুনতে থাকে। তার কথা শেষ হলে মেঘ সরে যায় এবং হযরত মূসা (আঃ) তাদের নিকট চলে আসেন। তখন তারা তাকে বলেঃ “হে মূসা (আঃ)! আমরা কখনও ঈমান আনবো না যে পর্যন্ত আমরা আমাদের প্রভুকে আমাদের সামনে দেখতে পাই। এ ঔদ্ধত্যের ফলে। এক ভূমিকম্প আসে এবং তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যায়। এখন হযরত মূসা (আঃ) খাটি অন্তরে প্রার্থনা করতে আরম্ভ করেন এবং বলেন যে, এর চেয়ে তো বরং এর পূর্বেই মরে যাওয়া ভাল ছিল। নির্বোধদের কার্যের জন্যে আল্লাহ পাক যেন তাকে ধ্বংস না করেন। ওরা তো বানী ইসরাঈলের মধ্যে উত্তম লোক ছিল। এখন তিনি একাই ফিরে গেলে তাদেরকে কি উত্তর দেবেন? কেই বা তাঁর কথা বিশ্বাস করবে এবং কেই বা আর তাঁর উপর ঈমান আনবে? সুতরাং আল্লাহ তা'আলা যেন তার তাওবা কবূল করেন ও তার প্রতি দয়া করেন।হযরত মূসা (আঃ) এভাবে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে প্রার্থনা করতে থাকেন। অবশেষে তার প্রার্থনা মঞ্জুর হয় এবং আল্লাহ ঐ মৃতদেরকে পুনর্জীবিত করেন। এখন সবাই সম্মিলিতভাবে বানী ইসরাঈলের পক্ষ হতে তাওবা করতে আরম্ভ করে। তাদেরকে বলা হয় যে, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের জীবনকে ধ্বংস করবে এবং একে অপরকে হত্যা করবে, সেই পর্যন্ত তাদের তাওবা ককূল করা হবে না। সুদ্দী কাবীর (রঃ) বলেন যে, এটা বানী ইসরাঈলের পরস্পর রক্তারক্তির পরের ঘটনা। এর দ্বারা এটাও জানা যাচ্ছে যে, এ সম্বোধন সাধারণ হলেও প্রকৃতপক্ষে এটা দ্বারা উদ্দেশ্য এই সত্তর ব্যক্তিই বটে।ইমাম রাযী (রঃ) স্বীয় তাফসীরে এই সত্তর ব্যক্তির ঘটনায় লিখেন যে, তারা জীবিত হওয়ার পর বলেছিলঃ “হে নবী (আঃ)! আপনি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন যে, তিনি যেন আমাদেরকে নবী করেন। তিনি প্রার্থনা করেন এবং তা ককূল হয়। কিন্তু এ কথাটি গরীব। হযরত মূসা (আঃ)-এর যুগে হযরত হারূন (আঃ) ছাড়া এবং তার পরে হযরত ইউশা (আঃ) ছাড়া আর কোন নবী থাকার প্রমাণ নেই। আহলে কিতাব এটাও দাবী করে যে, ঐসব লোক তাদের প্রার্থনা অনুযায়ী ঐ স্থানেই আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখেছিল। এটাও ভুল কথা। কেননা, হযরত মূসা (আঃ) স্বয়ং যখন আল্লাহকে দর্শনের প্রার্থনা করেন তখন তাঁকে নিষেধ করা হয়। তাহলে এই সত্তরজন লোক দীদার-ই-ইলাহীর ঔজ্জ্বল্য কিরূপে সহ্য করতো?এ আয়াতের তাফসীরে আর একটি মত এও আছে যে, তারা বলেঃ হযরত! আমার কি জানি? আল্লাহ স্বয়ং প্রকাশিত হয়ে আমাদেরকে বলেন না কেন? তিনি আপনার সাথে কথা বলবেন আর আমাদের সাথে বলবেন না এর কারণ কি হতে পারে? যে পর্যন্ত না আমরা তাকে স্বচক্ষে দেখতে পাই, কখনও ঈমান আনবো না।' এ কথার কারণে তাদের উপর আল্লাহর ক্রোধ ও অভিশাপ বর্ষিত হয় এবং তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়। পুনরায় জীবিত করা হয়। অতঃপর মূসা (আঃ) তাদেরকে বলেনঃ “এখন তোমরা তাওরাতকে ধরে রাখো।' তারা আবার অস্বীকার করে। এবার ফেরেশতাগণ পাহাড় উঠিয়ে এনে তাদের মাথার উপর লটকিয়ে রেখে বলেন যে, এবার না মানলে তাদের উপর পাহাড় নিক্ষেপ করা হবে। এর দ্বারা এও জানা গেল যে, মৃত্যুর পরে জীবিত হয়ে পুনরায় তারা ‘মুকাল্লাফ’ হয়েছিল অর্থাৎ তাদের প্রতি আল্লাহর আহকাম জারী হয়েছিল। মাঅরদী বলেছেন যে, কেউ কেউ বলেছেনঃ “যখন তারা আল্লাহর এই বড় নিদর্শন দেখলো, মৃত্যুর পরে জীবিত হলো তখন শরীয়তের নির্দেশাবলী তাদের উপর হতে সরে গেল। কেননা, তখন তো তারা সব কিছু মানতে বাধ্য ছিল। দ্বিতীয় দল বলেন যে, এটা নয়, বরং এটা সত্ত্বেও তাদের উপর শরীয়তের আহকাম জারী থাকবে। কুরতুবী (রঃ) বলেন যে, সঠিক কথা এটাই। এসব ঘটনা তাদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘটেছিল। এটা তাদেরকে শরীয়ত পালন হতে আযাদ করতে পারে না। স্বয়ং বানী ইসরাঈলও বড় বড় অলৌকিক ঘটনা দেখেছিল। স্বয়ং তাদের উপরেই এমন এমন ঘটনা ঘটেছিল যা ছিল সম্পূর্ণরূপে অসাধারণ ও স্বভাব বিরুদ্ধ। তা সত্ত্বেও তো তাদের উপর শরীয়তের নির্দেশাবলী চালু ছিল। এ রকমই এটাও। এটাই সঠিক ও স্পষ্ট কথা। আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে বেশী জানেন।