আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছি,[১] তবে ওরা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন কিছুকে অংশী করতে বাধ্য করে, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের কথা মান্য করো না।[২] আমারই নিকট তোমাদের প্রত্যাবর্তন; অতঃপর তোমরা যা কিছু করেছ, আমি তা তোমাদেরকে জানিয়ে দেব।
[১] কুরআন কারীমের বিভিন্ন স্থানে মহান আল্লাহ তাঁর একত্ববাদের ও ইবাদতের আদেশ দানের সাথে সাথে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করারও আদেশ দিয়েছেন। যাতে একথা সুস্পষ্ট হয় যে, আল্লাহর প্রতিপালকত্ব ও উপাস্যত্বের চাহিদা তারাই সঠিকভাবে বুঝতে ও পূরণ করতে পারে, যারা পিতা-মাতার আনুগত্য ও খিদমতের চাহিদাকে বুঝে ও পূরণ করে থাকে। যে ব্যক্তি এ কথা বুঝতে অক্ষম যে, পৃথিবীতে তার অস্তিত্ব তার মাতা-পিতার মিলনের একান্ত ফল এবং তার লালন-পালন তাদের সীমাহীন করুণা ও মায়া-মমতার ফসল। অতএব তাদের খিদমতে কোন প্রকার অনীহা ও তাদের কথার কোন প্রকার অবাধ্যতা প্রকাশ করা কোনক্রমেই সন্তানের উচিত নয়। পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান অবশ্যই সৃষ্টিকূলের সৃষ্টিকর্তাকে বুঝতে এবং তাঁর একত্ববাদ ও ইবাদতের চাহিদা পূরণ করতে অক্ষম। এই কারণেই পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার তাকীদ হাদীসেও এসেছে। এক হাদীসে মাতা-পিতার সন্তুষ্টিকে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তাঁদের অসন্তুষ্টিকে আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ বলা হয়েছে। (সূরা ইসরা ১৭:২৩-২৪ আয়াত দ্রষ্টব্য)[২] অর্থাৎ, মাতা-পিতা যদি শিরক করতে (অনুরূপ অন্যান্য পাপ করতে) আদেশ করে এবং এর জন্য তারা যদি চাপ সৃষ্টি করে, তবুও তাদের আনুগত্য করা চলবে না। কেননা, لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق অর্থাৎ, আল্লাহর অবাধ্যতায় কোন ব্যক্তির আনুগত্য চলবে না। (আহমাদ ৫/৬৬, হাকেম, সহীহুল জামে' ৭৫২০নং) এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ হিসাবে সা'দ বিন আবী অক্কাস (রাঃ)-এর ঘটনা বর্ণিত হয়। কারণ যখন তিনি মুসলমান হয়ে গেলেন, তখন তাঁর মাতা শপথ করেছিলেন যে, আমি আমরণ পানাহার করব না; যদি না তুমি মুহাম্মাদের নবুঅতকে অস্বীকার করেছ! শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর মাতার মুখে জোরপূর্বক খাবার পুরে দিয়েছিলেন। যার জন্য উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়।(মুসলিম, তিরমিযীঃ সূরা আনকাবূতের ব্যাখ্যা পরিচ্ছেদ)