১৯-২৩ নং আয়াতের তাফসীরমহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তারা কি দেখে না যে, তারা তো কিছুই ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে সৃষ্টি করে দিলেন। কিন্তু এর পরেও তারা মৃত্যুর পর পুনর্জীবনকে বিশ্বাস করে না। অথচ এর উপর কোন দলীলের প্রয়োজন হয় না। যিনি প্রথমে সৃষ্টি করতে পারেন তাঁর পক্ষে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা খুবই সহজ।এরপর তিনি তাদেরকে হিদায়াত করছেনঃ তোমরা ভূ-পৃষ্ঠে বিদ্যমান ও বিরাজমান আল্লাহ তা'আলার নিদর্শনাবলী সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা-গবেষণা কর। আকাশমণ্ডল, নক্ষত্ররাজি, ভূ-মণ্ডল, পাহাড়-পর্বত, গাছ-পালা, বন-জঙ্গল, নদ-নদী, সাগর-উপসাগর, ফল-মূল, ক্ষেত-খামার ইত্যাদির প্রতি তাকিয়ে দেখো যে, এগুলোর কোনই অস্তিত্ব ছিল না। এগুলোর সবই আল্লাহ তাআলাই সৃষ্টি করেছেন। তোমরা কি মনে কর যে, এতো বড় কারিগর ও ব্যাপক ক্ষমতাবান আল্লাহ কিছুই করতে পারেন না? তিনি তো শুধু হও’ বললেই সবই হয়ে যায়। তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই করতে পারেন। তার জন্যে কোন উপকরণের প্রয়োজন নেই। এজন্যেই তো তিনি বলেনঃ তারা কি লক্ষ্য করে না যে, কিভাবে আল্লাহ সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করেন, অতঃপর তা পুনরায় সৃষ্টি করেন? এটা তো আল্লাহর জন্যে সহজ। যেমন অন্য আয়াতে তিনি বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “আল্লাহ তিনিই যিনি সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করেন, অতঃপর তা পুনরায় সৃষ্টি করেন এবং এটা তার কাছে খুবই সহজ।” (৩০:২৭)।অতঃপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং অনুধাবন কর, কিভাবে তিনি সৃষ্টি শুরু করেছেন। অতঃপর তিনি সৃষ্টি করবেন কিয়ামতের দিন পরবর্তী সৃষ্টি। আল্লাহ তো সর্ববিষয়ে শক্তিমান। আল্লাহ পাকের এ উক্তিটি তার নিম্নের উক্তির সাথে সাদৃশ্য যুক্তঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি তাদেরকে দুনিয়ার প্রতিটি অংশে এবং স্বয়ং তাদের নফসের মধ্যে আমার এমন নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করবো যাতে তাদের সামনে সত্য প্রকাশিত হয়ে পড়বে।” (৪১:৫৩)যেমন আর এক জায়গায় তিনি বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তারা কি কোন কিছু ছাড়াই সৃষ্ট হয়েছে, না তারা নিজেরাই নিজেদের সৃষ্টিকারী? না তারা আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছে? না, বরং তারা (আল্লাহর উপর) বিশ্বাস করে না।” (৫২:৩৫-৩৬) মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন এবং যার প্রতি ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। তিনি পরম বিচারপতি, অধিপতি। তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই করেন। কেউ তাঁর হুকুম নড়াতে-টলাতে পারে না। কেউ তাঁর কাছে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে না। পক্ষান্তরে তিনি সবারই উপর বিজয়ী ও পূর্ণ ক্ষমতাবান। তিনি যাকে ইচ্ছা প্রশ্ন করবেন। সবাই তার অধিকারভুক্ত, সবাই তার অধীনস্থ। সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা এবং সবকিছুরই মালিক তিনিই। তিনি যা কিছু করেন সবই ন্যায়ের ভিত্তিতে করেন। যেহেতু তিনিই মালিক, তিনি যুলুম হতে পবিত্র। হাদীস শরীফে আছে যে, আল্লাহ তা'আলা যদি সপ্ত আসমানবাসী ও সপ্ত যমীনবাসীর উপর শাস্তি অবতীর্ণ করেন তবুও তিনি অত্যাচারী সাব্যস্ত হবেন না। শাস্তি দেয়া এবং দয়া করা সবই তাঁরই হাতে। কিয়ামতের দিন সবাই তারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। সবকেই তাঁরই নিকট হাযির হতে হবে। আকাশবাসী ও পৃথিবীবাসীদের কেউই আল্লাহকে ব্যর্থ ও অসমর্থ করতে পারে না। তিনি সবারই উপর বিজয়ী। সবাই আল্লাহ হতে ভীত-সন্ত্রস্ত। সবাই তার মুখাপেক্ষী এবং তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি সবকিছু হতে অভাবমুক্ত। আল্লাহ ব্যতীত মানুষের কোন অভিভাবকও নেই এবং সাহায্যকারীও নেই। যারা আল্লাহর নিদর্শন ও তার সাক্ষাৎ অস্বীকার করে, তারাই তাঁর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়। তাদের জন্যে আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।