مٰلِكِ
یَوْمِ
الدِّیْنِ
۟ؕ
3

৪ নং আয়াতের তাফসীর:

مالك এর অর্থ কোন বস্তুর ওপর এমন অধিকার থাকা যার ব্যবহার, পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও হস্তান্তরসহ সকল প্রকার একচ্ছত্র ক্ষমতা রাখে। যেমন পরকালে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে জান্নাতে ও জাহান্নামে দেবেন এ ব্যাপারে তিনি ব্যতীত আর কোন মালিক নেই। তিনি দয়ালু হয়ে জাহান্নামের শাস্তিকে কারো জন্য কম করে দেবেন, আবার প্রাপ্য হিসেবে কারো জন্য বৃদ্ধি করে দেবেন, এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কোন মালিক নেই। সকল কিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(لِلّٰهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ)

“আল্লাহরই জন্য নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের আধিপত্য।”(সূরা শুরা ৪২:৪৯)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ وَهُوَ عَلٰي كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ)

“আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর কর্তৃত্ব একমাত্র তাঁরই; তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান; তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।”(সূরা হাদীদ ৫৭:২)

অতএব আকাশ ও পৃথিবীর একমাত্র অধিপতি আল্লাহ তা‘আলা। শুধু তাই নয়, এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছুর মালিকও তিনি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَلِلّٰهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا يَخْلُقُ مَا يَشَا۬ءُ)

“আসমান ও জমিনের এবং এদের মধ্যে যা কিছু আছে তার সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন।”(সূরা মায়িদাহ ৫:১৭)

অনুরূপভাবে তিনি আরো বলেন:

(وَلِلّٰهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَإِلَيْهِ الْمَصِيرُ)

“আসমান ও জমিনের এবং এদের মধ্যে যা কিছু আছে তার সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই, আর প্রত্যাবর্তন তাঁরই দিকে।”(সূরা মায়িদাহ ৫:১৮) অতএব যিনি আসমান ও জমিন এবং উভয়ের মাঝে সবকিছুর, মালিক তিনি আমাদের জীবন-মরণেরও মালিক। সুতরাং তাঁর পৃথিবীতে তাঁরই দেয়া জীবন বিধানের আলোকে আমাদের চলা উচিত।

(يَوْمِ الدِّيْنِ) “প্রতিফল দিবস” বলতে কিয়ামতের দিনকে বুঝানো হয়েছে, সেদিন আল্লাহ তা‘আলা ভাল-মন্দ সকল কাজ-কর্মের প্রতিদান দেবেন এবং সেদিন আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কোন রাজাধিরাজ থাকবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَمَآ اَدْرٰٿکَ مَا یَوْمُ الدِّیْنِﭠﺫ ثُمَّ مَآ اَدْرٰٿکَ مَا یَوْمُ الدِّیْنِﭡﺚ یَوْمَ لَا تَمْلِکُ نَفْسٌ لِّنَفْسٍ شَیْئًاﺚ وَالْاَمْرُ یَوْمَئِذٍ لِّلّٰهِ)

“প্রতিদান দিবস কী? তা কি তুমি জানো? অতঃপর বলিঃ প্রতিদান দিবস কী তা কি তুমি অবগত আছ? সেদিন কোন মানুষ অপরের জন্য কিছু করার সামর্থ রাখবে না, সেদিন সকল কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহরই।”(সূরা ইনফিতার ৮২:১৭-১৯)

সেদিন কোন ফেরেশতা, মানুষ, জিন কেউ কোন কিছু করতে পারবে না এবং তারা সেখানে কোন কথাও বলতে পারবে না, একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা যাকে অনুমতি দেবেন তিনি ব্যতীত।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(یَوْمَ یَقُوْمُ الرُّوْحُ وَالْمَلٰ۬ئِکَةُ صَفًّاﺞ لَّا یَتَکَلَّمُوْنَ اِلَّا مَنْ اَذِنَ لَھُ الرَّحْمٰنُ وَقَالَ صَوَابًا)

“সেদিন রূহ ও ফেরেশতারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে। দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন, সে ব্যতীত অন্য কেউ কথা বলতে পারবে না এবং সে সঠিক কথা বলবে।”(সূরা নাবা ৭৮:৩৮)

সেদিন আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক ব্যক্তিকে পরিপূর্ণ প্রতিদান দেবেন। কাউকে কমও দেবেন না এবং কাউকে বেশিও দেবেন না। কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না। ইনসাফের সাথে সকলে ভাল মন্দ কর্মের ন্যায্য প্রতিদান ও প্রতিফল পাবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(يَوْمَئِذٍ يُّوَفِّيهِمُ اللّٰهُ دِينَهُمُ الْحَقَّ)

“সেদিন আল্লাহ তাদের প্রাপ্য প্রতিফল পুরোপুরি দেবেন।”(সূরা নূর ২৪:২৫)

তাই প্রতিটি মানুষের মনে রাখা উচিত যে, আমরা ভাল-মন্দ যা কিছু করব প্রতিটিরই ফলাফল ভোগ করতে হবে। অতএব আমাদের মন্দ কর্ম পরিহার করে ভাল কর্মে অগ্রগামী হওয়া উচিত।