৩-৪ নং আয়াতের তাফসীর উর্ধ্বজগতের বর্ণনা দেয়ার পর আল্লাহ তাআ’লা এখানে নিম্ন জগতের বর্ণনা দিয়েছেন। যমীনকে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে বিস্তৃত করে আল্লাহ তাআ’লাই এটাকে বিছিয়ে দিয়েছেন। এতে দৃঢ় পাহাড় তিনিই স্থাপন করেছেন। এতে নদ-নদী ও প্রস্রবণ তিনিই প্রবাহিত করেছেন। এর ফলে বিভিন্ন আকারের বিভিন্ন রং এর এবং বিভিন্ন স্বাদের ফল মূলের বৃক্ষাদি সিঞ্চিত হয়ে থাকে। জোড়ায় জোড়ায় ফলমূল তিনিই সৃষ্টি করেছেন। ওগুলির মধ্যে কোনটি মিষ্টি এবং কোনটি টক। দিবস ও রজনী পর্যায়ক্রমে আসা যাওয়া করছে। একটির আগমন ঘটছে এবং অপরটির প্রস্থান হচ্ছে। এইসব ব্যবস্থাপনা সেই ব্যাপক ক্ষমতাবান আল্লাহর দ্বারাই হচ্ছে। আল্লাহ তাআ’লার এইসব নিদর্শন, নিপুণতা এবং প্রমাণাদির উপর যে ব্যক্তি চিন্তাপূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে সে অবশ্যই সুপথ প্রাপ্ত হবে। যমীনের খণ্ডগুলি মিলিতভাবে রয়েছে। মহান আল্লাহর শক্তি দেখে বিস্মিত হতে হয় যে, পৃথিবীর এক খণ্ডে প্রচুর ফসল উৎপাদিত হয়, আবার আর একখণ্ডে কিছুই জন্মে না। কোন জায়গার মাটি লাল, কোন জায়গার মাটি সাদা, কোন মাটি কালো, কোনটি কংকরময়, কোনটা নরম, কোনটা শক্ত, কোনটা মিষ্টি, কোনটা তিক্ত, কোনটা বালুকাময় এবং কোনটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। মোট কথা, এটাও সৃষ্টিকর্তার মহা শক্তির নিদর্শন, যা বলে দিচ্ছে যে, কার্য্য সম্পাদনকারী, স্বেচ্ছাচারী এবং সারা বিশ্বের একচ্ছত্র অধিপতি হচ্ছেন সেই একক, অদ্বিতীয় এবং অংশীবিহীন আল্লাহ। তিনিই হচ্ছেন সবকিছুরই সৃষ্টিকর্তা। তিনি ছাড়া অন্য কেউ মা'বুদ নেই এবং কোন প্রতিপালকও নেই।(আরবি) শব্দদ্বয়কে যদি (আরবি) শব্দের উপর বা সংযোগ ধরা হয় তবে পেশ দিয়ে পড়তে হবে। আর যদি (আরবি) শব্দের উপর সংযোগ ধরা হয় তবে (আরবি) ধরে যের দিয়ে পড়তে হবে। ইমামদের দল দু’ভাবেই পড়েছেন। (আরবি) বলা হয় ঐ গাছকে যার কয়েকটি গুঁড়ি ও শাখা হয়। যেমন ডালিম ডুমুর, এবং কোন কোন খেজুর গাছ। (আরবি) বলা হয় ঐ গাছকে যা এইরূপ হয় না বরং যার একটি মাত্র গুঁড়ি থাকে। এর থেকেই চাচাকে (আরবি) বলা হয়। হাদীসেও এটা এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত উমারকে (রাঃ) বলেনঃ “তোমার কি জানা নেই যে, চাচা পিতার মতই।”হযরত বারা’ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, একটি মূল অর্থাৎ একটি গুঁড়ির মধ্যে কয়েকটি শাখা বিশিষ্ট খেজুরের গাছ থাকে, আবার একটি গুঁড়িতে একটিই থাকে। এটাই হচ্ছে (আরবি) ও (আরবি)। অন্যান্য গুরুজনদেরও এটাই উক্তি। সবগুলির জন্যে একই পানি। অর্থাৎ বর্ষার পানি। অথচ স্বাদের দিক দিয়ে এবং ছোট ও বড় হওয়ার দিক থেকে ফলের মধ্যে বড়ই পার্থক্য রয়েছে। কোনটা মিষ্টি ও কোনটা টক। জামে তিরমিযীর হাদীসেও এই ব্যাখ্যা রয়েছে। মোট কথা, বিভিন্ন দিক দিয়ে পার্থক্য আছে। যেমন প্রকারে পার্থক্য, রকমে পার্থক্য, রং এ পার্থক্য, গন্ধে পার্থক্য, স্বাদে পার্থক্য, পাতায় পার্থক্য এবং তরুতাজায় পার্থক্য। কোনটা অতি মিষ্টি এবং কোনটা অতি তিক্ত। কোনটি খুবই সুস্বাদু, আবার কোনটি অত্যন্ত বিস্বাদ। রং-এও পার্থক্য রয়েছে। কোনটা লাল, কোনটা সাদা এবং কোনটা কালো। অনুরূপভাবে সতেজতার দিক দিয়েও পার্থক্য রয়েছে। অথচ খাদ্য হিসেবে সবই এক। ব্যাপক ক্ষমতাবান আল্লাহ তাআ’লার এগুলি অলৌকিক শক্তি। সুতরাং বোধশক্তি সম্পন্ন লোকের জন্যে এগুলি শিক্ষণীয় বিষয়। এগুলি স্বেচ্ছাচারী আল্লাহ তাআ’লার মহাশক্তির পরিচয় বহন করে এবং এটাই ঘোষণা করে যে, তিনি যা চান তাই হয়। জ্ঞানীদের জন্যে এই নিদর্শনগুলিই যথেষ্ট।