১৬ নং আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতের ১ম অংশে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জবান থেকে আকাশ-জমিনের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলা এ স্বীকারোক্তি নিচ্ছেন। অন্যত্র বলা হয়েছে মুশরিকরাও আল্লাহ তা‘আলার এ প্রকার তাওহীদ স্বীকার করত। কিন্তু তারা তাওহীদে রুবুবিয়্যাহ স্বীকার করলেও ইবাদত করত আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যান্য প্রতিমার। আল্লাহ তা‘আলাকে ছেড়ে এমন সৃষ্টিদেরকে অভিভাবক, বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষক মনে করত যারা নিজেদের লাভ-ক্ষতিরও ক্ষমতা রাখে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(قُلْ أَتَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ مَا لَا يَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّا وَّلَا نَفْعًا)
“বল: তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত এমন কিছুর ইবাদত কর, যারা তোমাদের ক্ষতি বা উপকার করার কোন ক্ষমতা রাখে না?” (সূরা মায়েদা ৫:৭৬)
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলাকে সব কিছুর মালিক মনে করা সত্ত্বেও তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যের ইবাদত করা এটা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।
পরবর্তীতে আল্লাহ তা‘আলা দৃষ্টান্ত পেশ করছেন, যেমনভাবে দৃষ্টিহীন ও দৃষ্টিমান এবং অন্ধকার ও আলো সমান হতে পারে না তেমনি তাওহীদপন্থী ও মুশরিক সমান হতে পারে না। কেননা তাওহীদপন্থীর হৃদয় তাওহীদের জ্যোতিতে আলোকিত থাকে, আর মুশরিক অর্থাৎ যারা আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের উপাসনা করে তারা তা হতে বঞ্চিত। ফলে সে তাওহীদের আলো দেখতে পায় না। কেননা সে এ ব্যাপারে অন্ধ। অনুরূপভাবে আলো ও অন্ধকার যেমন সমান নয় তেমনি এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতকারী যার হৃদয় ঈমানী জ্যোতিতে পরিপূর্ণ এবং মুশরিক, যার হৃদয় অজ্ঞতা ও কুসংস্কার দ্বারা পরিপূর্ণ তারা কক্ষনো এক হতে পারে না।
(أَمْ جَعَلُوْا لِلّٰهِ شُرَكَا۬ءَ خَلَقُوْا كَخَلْقِه)
অর্থাৎ মুশরিকরা যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার অংশীদার স্থির করছে তারা আল্লাহর সৃষ্টির মত কোন কিছু সৃষ্টি করেছে কি? ফলে তাদের কাছে বিষয়টি সাদৃশ্যপূর্ণ লাগছে যে, কে সৃষ্টিকর্তা আর সৃষ্টিকর্তা নয় তা আলাদা করা যাচ্ছে না, তাই তারা সবার ইবাদত করছে। বিষয়টি তো এমন নয়। বরং মুশরিকরাও স্বীকার করে যে, আল্লাহ তা‘আলাই একমাত্র স্রষ্টা। তাহলে কেন তাদের ইবাদত কর এবং তাদের মাধ্যম ধরে আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য অর্জন করতে চাও। তাদের কথা আল্লাহ তুলে ধরে বলেন:
(مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَي اللّٰهِ زُلْفٰي)
“আমরা তো এদের উপাসনা এজন্য করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্যে পৌঁছে দেয়।” (সূরা যুমার ৩৯:৩)
সুতরাং সব কিছুর মালিক, স্রষ্টা ও অধিপতি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা এ কথা জানার পরেও যারা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করে তাহলে তাদের জন্য অপমানকর শাস্তি রয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মক্কার মুশরিকরা স্বীকার করত ও বিশ্বাস করত যে, সব কিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা কিন্তু ইবাদত করার ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যের পূজা করত।
২. ঈমানদার আর মুশরিক সমান হতে পারে না যেমনিভাবে আলো ও অন্ধকার সমান নয়।
৩. কোন ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলাকে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে বিশ্বাস করলেই মুমিন হবে না যতক্ষণ না সকল ইবাদত আল্লাহ তা‘আলার জন্য করে।