لَهٗ
مُعَقِّبٰتٌ
مِّنْ
بَیْنِ
یَدَیْهِ
وَمِنْ
خَلْفِهٖ
یَحْفَظُوْنَهٗ
مِنْ
اَمْرِ
اللّٰهِ ؕ
اِنَّ
اللّٰهَ
لَا
یُغَیِّرُ
مَا
بِقَوْمٍ
حَتّٰی
یُغَیِّرُوْا
مَا
بِاَنْفُسِهِمْ ؕ
وَاِذَاۤ
اَرَادَ
اللّٰهُ
بِقَوْمٍ
سُوْٓءًا
فَلَا
مَرَدَّ
لَهٗ ۚ
وَمَا
لَهُمْ
مِّنْ
دُوْنِهٖ
مِنْ
وَّالٍ
۟
3

১১ নং আয়াতের তাফসীর:

উক্ত আয়াতে বলা হচ্ছে যে, মানুষের সামনে-পিছনে, ডানে-বামে তাকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য প্রহরী নিযুক্ত রয়েছে। مُعَقِّبٰتٌ শব্দটি معقبة এর বহুবচন। অর্থ এক জনের পর অপর জন্য আসা। অর্থাৎ একজন ফেরেশতা চলে গেলে অন্য ফেরেশতা আগমন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করে। তারা অনিষ্টকারীর অনিষ্ট থেকে মানুষকে সংরক্ষণ করে। এবং একদলকে নিযুক্ত করা হয়েছে তাদের কার্যকলাপসমূহ লিখে রাখার জন্য। যার উপর ভিত্তি করে তাদেরকে আখিরাতে প্রতিদান দেয়া হবে। এই প্রহরী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “তোমাদের কাছে ফেরেশতারা পালাক্রমে আগমণ করে থাকেন দিবসে ও রজনীতে। ফজর ও আসরের সালাতের সময় উভয় দলের মিলন ঘটে। রাত্রে অবস্থানকারী ফেরেশতাগণ রাত্রি শেষে আকাশে উঠে যান। বান্দাদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন: তোমরা আমার বান্দাদেরকে কী অবস্থায় ছেড়ে এসেছ? তারা উত্তরে বলেন: আমরা তাদের কাছে আগমণের সময় সালাতের অবস্থায় তাদেরকে পেয়েছি এবং বিদায়ের সময়ও তাদেরকে সালাতের অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। (সহীহ বুখারী হা: ৫৫৫)

হেফাযতকারী ফেরেশতাদের কাজ শুধু পার্থিব বিপদাপদ থেকে রক্ষা করাই নয় বরং তারা মানুষকে পাপ কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখারও চেষ্টা করে। মানুষের মনে সাধুতা ও আল্লাহ তা‘আলাভীতির প্রেরণা জাগ্রত করে যাতে সে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। এরপরও যদি সে ফেরেশতাদের প্রেরণার প্রতি উদাসীন হয়ে পাপ কাজে লিপ্ত হয়, তবে তারা দু‘আ ও চেষ্টা করে যাতে সে শীঘ্র তাওবা করে ক্ষমা করিয়ে নেয়। অগত্যা যদি কোনরূপেই হুশিয়ার না হয় তখন তার আমলনামায় গোনাহ লেখা হয়।

(إِنَّ اللّٰهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ)

-এই আয়াতের তাফসীর ভাল-মন্দ দুদিকেই করা যায়:

(১) কোন জাতি যদি নিজেদের অবস্থানকে ভাল ও উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে চায় তাহলে আল্লাহ তা‘আলা সে ভাল ও উন্নতির সুযোগ করে দেন। হাত গুটিয়ে বসে থাকলে আল্লাহ তা‘আলা অবস্থার পরিবর্তন করে দিবেন না।

(২) কোন জাতি যদি পাপ কাজ ও কুফরী করে নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে নেয় তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের থেকে নেয়ামত ছিনিয়ে নেন। মোটকথা মানুষের চিন্তা-চেতনা, কাজ-কর্ম যেদিকে ধাবিত হয় আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সেদিকে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। তারা যদি ভাল ও উন্নতির দিকে যায় আল্লাহ তা‘আলা তাদের উন্নতির পথ খুলে দেন, আর যদি পাপ ও কুফরী করে নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঢেলে দেয় তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের থেকে নেয়ামত ছিনিয়ে নিয়ে ধ্বংস করে দেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(ذٰلِكَ بِأَنَّ اللّٰهَ لَمْ يَكُ مُغَيِّرًا نِّعْمَةً أَنْعَمَهَا عَلٰي قَوْمٍ حَتّٰي يُغَيِّرُوْا مَا بِأَنْفُسِهِمْ)

“এটা এজন্য যে, যদি কোন সম্প্রদায় নিজের অবস্থার পরিবর্তন না করে তবে আল্লাহ তা‘আলা এমন নন যে, তিনি তাদেরকে যে সম্পদ দান করেছেন, সেটা পরিবর্তন করবেন।” (সূরা আনফাল ৮:৫৩)

সুতরাং এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যেক জাতিকে তাদের অবস্থায় উন্নতি এবং নেয়ামতসমূহ পরিপূর্ণ মাত্রায় পেতে হলে সকল প্রকার খারাপ ও নাফরমানীমূলক কাজ পরিত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় তা সম্ভব নয়। আর আল্লাহ তা‘আলা যদি কারো অনিষ্ট করতে চান তাহলে এমন কেউ নেই যে, তাঁর অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবে। অতএব সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, অন্য কেউ নয়।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মানুষকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য দিবা-রাত্রিতে ফেরেশতা নিযুক্ত করা হয়েছে, তারা পার্থিব রক্ষা করার পাশাপাশি সকল আমল সংরক্ষণ করে।

২. প্রত্যেক জাতিকে নিজ চেষ্টার মাধ্যমে তার নেয়ামতকে পূর্ণ করে নিতে হবে।

৩. আল্লাহ তা‘আলা কোন জাতিকে ততক্ষণ ধ্বংস করেন না যতক্ষণ না নিজেদের অবস্থাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।