You are reading a tafsir for the group of verses 12:89 to 12:92
قَالَ
هَلْ
عَلِمْتُمْ
مَّا
فَعَلْتُمْ
بِیُوْسُفَ
وَاَخِیْهِ
اِذْ
اَنْتُمْ
جٰهِلُوْنَ
۟
قَالُوْۤا
ءَاِنَّكَ
لَاَنْتَ
یُوْسُفُ ؕ
قَالَ
اَنَا
یُوْسُفُ
وَهٰذَاۤ
اَخِیْ ؗ
قَدْ
مَنَّ
اللّٰهُ
عَلَیْنَا ؕ
اِنَّهٗ
مَنْ
یَّتَّقِ
وَیَصْبِرْ
فَاِنَّ
اللّٰهَ
لَا
یُضِیْعُ
اَجْرَ
الْمُحْسِنِیْنَ
۟
قَالُوْا
تَاللّٰهِ
لَقَدْ
اٰثَرَكَ
اللّٰهُ
عَلَیْنَا
وَاِنْ
كُنَّا
لَخٰطِـِٕیْنَ
۟
قَالَ
لَا
تَثْرِیْبَ
عَلَیْكُمُ
الْیَوْمَ ؕ
یَغْفِرُ
اللّٰهُ
لَكُمْ ؗ
وَهُوَ
اَرْحَمُ
الرّٰحِمِیْنَ
۟
3

৮৯-৯২ নং আয়াতের তাফসীর হযরত ইউসুফের (আঃ) ভাইয়েরা যখন তাঁর কাছে অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত ও দারিদ্রের অবস্থায় পৌঁছেন এবং তাঁর কাছে নিজেদের দুঃখ-দুর্দশা, পিতা ও পরিবারবর্গের বিপদ-আপদের বর্ণনা দেন তখন তাঁর অন্তর বিগলিত হয়ে যায় এবং আবেগে অভিভূত হয়ে পড়েন। বর্ণিত আছে যে, সেই সময় তিনি স্বীয় মাথার তাজ নামিয়ে ফেলেন এবং ভাইদেরকে বলেনঃ “আপনারা ইউসুফের (আঃ) সাথে এবং তার ভাই বিনইয়ামীনের সাথে যে ব্যবহার করেছিলেন তা আপনাদের স্মরণ আছে কি, যখন আপনারা অজ্ঞ ছিলেন? এ জন্যেই পূর্ববর্তী কোন কোন গুরুজন বলেন যে, আল্লাহ তাআ’লার প্রত্যেক পাপী বান্দাই অজ্ঞ ও মুখ। অতঃপর তিনি (আরবি) এই আয়াতটি পাঠ করেন। (১৬: ১১৯)। বাহ্যতঃ এটা জানা যাচ্ছে যে, প্রথম দু’দফার সাক্ষাতের সময় নিজের পরিচয় দানের নির্দেশ আল্লাহ তাআ’লার পক্ষ হতে হযরত ইউসুফের (আঃ) প্রতি ছিল না। তৃতীয় বারে সাক্ষাতের সময় তাঁকে নিজের পরিচয় দানের নির্দেশ দেয়া হয়। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআ’লাই সবচেয়ে ভাল জানেন। যখন কষ্ট বেড়ে গেল এবং কাঠিণ্য বৃদ্ধি পেলো তখন আল্লাহ তাআ’লা কাঠিণ্য ও সংকীর্ণতা দূর করে দিলেন এবং প্রশস্ততা আনয়ন করলেন। যেমন কুরআন কারীমে ঘোষিত হয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “কষ্টের সাথেই তো স্বস্তি আছে। অবশ্য কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে।” (৯৪: ৫-৬) হযরত ইউসুফের (আঃ) প্রশ্নে তাঁর ভ্রাতাগণ বিস্ময়ে চমকে উঠেন। এর একটা কারণ এই ছিল যে, মুকুট নামিয়ে দেয়ার ফলে তার কপালের নিদর্শন তাঁরা দেখে নেন। ঐ সময় তাঁরা তাঁকে প্রশ্ন করেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তা হলে তুমিই কি ইউসুফ?” (১২:৯০) ইবনু মুহাইসিন (রঃ) (আরবি) পড়েছেন। প্রথমটিই প্রসিদ্ধ কিরআত। কেননা (আরবি) বা প্রশ্ন (আরবি) এর উপর ইঙ্গিত করে। অর্থাৎ এতে তাঁরা বিস্মিত হন যে, তারা তাঁর কাছে দু’বছর বা তার চেয়েও বেশি সময় ধরে যাতায়াত করছেন, অথচ তাঁকে তাঁরা চিনতে পারেন নাই।, আর তিনি কিন্তু তাদেরকে চিনেছেন ও নিজেকে গোপন করেছেন! এজন্যেই তারা প্রশ্নের সুরে বলেনঃ “তুমি কি ইউসুফ?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “হ্যাঁ, আমিই ইউসুফ (আঃ) এবং এটা (বিনইয়ামীন) আমার (সহোদর) ভাই। আল্লাহ তাআ’লা আমাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, দীর্ঘ দিনের বিচ্ছেদের পর আমাদেরকে তিনি মিলিত করেছেন। আল্লাহ্ভীতি ও ধৈর্যশীলতা বিফলে যায় না।”এখন হযরত ইউসুফের (আঃ) ভ্রাতাগণ তাঁর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নেন। তাঁরা তাঁকে বলেনঃ “বাস্তবিকই দৈহিক সৌন্দর্য ও নৈতিক চরিত্র উভয় দিক দিয়েই তুমি আমাদের চেয়ে উত্তম। রাজত্ব ও ধন-মালের দিক দিয়েও আল্লাহ তোমাকে আমাদের উপর মর্যাদা দান করেছেন।” অনুরূপভাবে কারো কারো মতে নুবওয়াতের দিক দিয়েও তিনি ভাইদের উপর প্রাধান্য লাভ করেছিলেন। কেননা, তিনি নবী ছিলেন এবং তাঁর ভ্রাতাগণ নবী ছিলেন না। এই স্বীকারোক্তির পর তাঁরা তাঁদের ভুলও স্বীকার করেন। তৎক্ষণাৎ হযরত ইউসুফ (আঃ) তাদেরকে বলেনঃ “আজকের পরে আমি আপনাদের এই ভুলের কথা মনেও করবো না। এ কারণে আমি আপনাদেরকে শাসন গর্জন করতে চাইনে। আমি আপনাদের উপর কোন অভিযোগও করছি না। আপনাদের উপর আমি রাগান্বিত নই। বরং আমার প্রার্থনা এই যে, আল্লাহ তাআ’লাও আপনাদেরকে ক্ষমা করুন! তিনি সর্বাপেক্ষা বড় দয়ালু।” তার ভ্রাতাগণ ওজর পেশ করলেন এবং তিনি তা কবুল করলেন। অর্থাৎ তিনি তাদেরকে বললেনঃ “আপনারা যা করেছেন, আল্লাহ তার উপর পর্দা করে দিন! তিনি হচ্ছেন পরম করুণাময়।”